সূরা আল-আদিয়াত পবিত্র কুরআনের ১০০ তম সুরা। এটি পবিত্র মক্কা নগরীতে অবতীর্ণ হয়। এ সূরায় প্রথম শব্দ আল-আদিয়াত। এ শব্দ থেকেই এ সুরার নামকরণ করা হয়েছে। এ সূরায় আয়াত সংখ্যা সর্বমোট ১১টি। তৎকালীন আরবে যখন এক ভয়ংকর অরাজকতা ও অস্থিতিশীলতা বিরাজমান ছিল, আরবের গোত্রসমূহ পরস্পর রক্তপাত ও লুণ্ঠনে নিয়োজিত ছিল, কোনো গোত্রই নিরাপদে ছিল না। এ প্রেক্ষাপটে এ সূরাটি অবতীর্ণ হয় একথা স্মরণ করে দেওয়ার জন্য যে, ধন-সম্পদের লোভে অন্যায় অসৎ কর্ম করলে আখিরাতে জবাবদিহি করতে হবে।
শব্দার্থ
الْعَدِيتِ - ধাবমান অশ্বরাজি
ضَبْحًا - ঊর্ধ্বশ্বাসে
فَالْمُوْرِيتِ - অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরণকারী
قدما - ক্ষুরাঘাতে, ক্ষুরের আঘাতে
الْمُغِيرَتِ - হামলাকারী, আক্রমণকারী, অভিযানকারী
صُبْحًا - প্রত্যুষে, প্রভাতে, প্রভাতকালে
اثرن - উৎক্ষিপ্ত করে
نقعا - ধূলি
وسطن - মধ্যে ঢুকে পড়ে
كنود - অকৃতজ্ঞ
شَهِيدٌ - সাক্ষী, অবহিত
حب - ভালোবাসা, আসক্তি
خَيْرٍ - ভালো, কল্যাণ, ধন-সম্পদ
شَدِيد - কঠোর, কঠিন, প্রবল
حصل - প্রকাশ করা হবে
الصُّدُورِ - অন্তরসমূহ, বক্ষসমূহ
خَبِيرٌ - অবহিত, সর্বজ্ঞাত
অনুবাদ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
وَالْعُدِيْتِ ضَبْحًا لا
১. শপথ ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বরাজির।
فَالْمُوْرِيتِ قَدْحًا لا
২. যারা ক্ষুরের আঘাতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত করে।
فَالْمُغِيرَتِ صُبْحًا لا
৩. যারা প্রভাতকালে অভিযান চালায়।
فَأَثَرْنَ بِهِ نَفْعًا :
৪. আর সে সময় ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে।
فَوَسَطنَ بِهِ جَمْعًا لا
৫. অতঃপর শত্রুদের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
إِنَّ الْإِنْسَانَ لِرَبِّهِ لَكَنُودُ :
৬. নিশ্চয়ই মানুষ তার প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ।
وَإِنَّهُ عَلَى ذُلِكَ لَشَهِيدٌ :
৭. আর সে এ বিষয়ে অবশ্যই অবহিত।
وَإِنَّهُ لِحُبِّ الْخَيْرِ لَشَدِيدٌ *
৮. এবং নিশ্চয়ই সে ধন-সম্পদের প্রতি প্রবলভাবে আসক্ত।
أَفَلَا يَعْلَمُ إِذَا بُعْثِرَ مَا فِي الْقُبُورِ : ४
৯. তবে কি সে সেই সম্পর্কে অবহিত নয়, যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত হবে?
وَحُصِلَ مَا فِي الصُّدُورِ
১০. এবং অন্তরে যা কিছু আছে তা প্রকাশ করা হবে?
إِنَّ رَبَّهُمْ بِهِمْ يَوْمَئِذٍ خَبِيرٌ
১১. সেদিন তাদের কী হবে, সে সম্পর্কে তাদের প্রতিপালক অবশ্যই সবিশেষ অবহিত।
ব্যাখ্যা
এ সূরা তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত। প্রথম পাঁচ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সামরিক অশ্বের নানা গুণ বর্ণনা এবং এগুলোর শপথ করেছেন। অতঃপর দ্বিতীয় পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা মানুষের দুটি বিশেষ স্বভাব সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো-
ক. স্রষ্টার প্রতি অকৃতজ্ঞতা।
খ. সম্পদের প্রতি লোভ-লালসা।
আর মানুষ স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে এ দুটি কাজ করে থাকে। অথচ এগুলো মানুষের করা একেবারেই অনুচিত।
এজন্য সূরার শেষ পর্যায়ে মানুষকে আখিরাত ও কবরের জীবনের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মানুষ কি জানে না যে তাকে কবরে যেতে হবে। অতঃপর কিয়ামতে তাদের সকল কার্যকলাপ প্রকাশ করা হবে। এমনকি সে অন্তরে যেসব অকৃতজ্ঞতা ও লোভ-লালসা পোষণ করত, তাও প্রকাশ করা হবে। পরিশেষে সমস্ত কিছুর বিচার করা হবে। আর সেদিনের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা খুব ভালোভাবেই অবহিত। সুতরাং মানুষের উচিত সকল অন্যায় ও অকৃতজ্ঞতা ত্যাগ করে সৎপথে জীবনযাপন করা।
শিক্ষা
এ সূরা থেকে আমরা নিম্নোক্ত শিক্ষা লাভ করি:
অতএব, আমরা সর্বদা এ সূরার শিক্ষা মনে রাখব। আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করব। কখনোই তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞ হবো না। সাথে সাথে ধন-সম্পদের লোভে পড়ে অন্যায় ও অসৎ কাজ করব না। বরং আখিরাতে জবাবদিহি করার কথা স্মরণ রেখে সর্বদা আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করব।